রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
শাকিব বিপ্লব।।
বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে হঠাৎ করে শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে রয়েছে ক্ষমতা বা কর্তৃত প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ এক দূর্ভিসন্দি। পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেনকে টার্গেট করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি প্রেক্ষাপট রচনায় একজন শ্রমিক নেতার সাথে বসচার জের ধরে শুরু হয় আন্দোলন। সেই আন্দোলন বেগবান করতে টেম্পু ইউনিয়ন নেতা যুবলীগের লিটন মোল্লা অগ্রভাগে ভূমিকা রাখলেও সমর্থন ছিল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী নেতার।
এরা সম্পর্কে নিকট আত্মীয়। যারদরুন একজন বাস চালকের সাথে অসৌজন্য আচরণের অভিযোগে আফতাব হোসেনের মত প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিল। অবশেষে টানা ৫ দিনের আন্দোলনের মুখে বাস মালিক সমিতির ইউনিয়নের দায়িত্ব থেকে স্বেচ্চায় অব্যাহতি আফতাব। গতমঙ্গলবার দুপুরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষনা দেন। সেই সাথে শ্রমিক আন্দোলনও স্থাগিত হয়ে যায়।
পরিবহন শ্রমিক রাজনীতির সাথে জড়িত একাধিক সূত্রের অভিন্ন অভিমত হচ্ছে, হঠাৎ ফুসকে ওঠা শ্রমিকদের নেতৃত্বের অগ্রভাগে লিটন মোল্লা ভূমিকায় থাকলেও নেপথ্যে ছিলেন বরিশাল মহানগর আ.লীগের প্রভাবশালী জনৈক এক নেতা। তার ইচ্ছা ছিল নথুল্লাবাদ টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণে নিতে অন্তত আফতাবকে যেকোন পন্থায় সরিয়ে দেয়া। আফতাবও আ.লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত।
কিন্তু ওই নেতার সাথে তার নীতিগত বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া টার্মিনাল থেকে মাসে উত্তলিত অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্যের বিষয়টিও রয়েছে। কিন্তু আফতাবকে ফাপোরে ফেলার সুযোগ মিলছিল না। গত ৩ জানুয়ারি বাস টার্মিনালে হঠাৎ করে বেশকিছু লোকাল গাড়ি এলোমেলো করা রাখা হয়। যা আফতাবের দৃষ্টি কারলে তার চিরচারিত স্বভাব শ্রমিকদের ওপর চরাও হন। এ সময় সামনে আসা প্রভাতি পরিবহন নামক বাস চালক আলমগীর হোসেনকে ক্ষিপ্ত আফতাব গালমন্দ দিয়ে শুরু করলে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। আলমগীরের অভিযোগ, বাস মালিক সমিতির সভাপতি তাকে লাঞ্ছিত করেছে।
এ খবর ছড়িয়ে পরার আগেই অপরাপর শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ের চারিপাশে অবস্থান নেয়। দাবি তোলা হয়, আফতাবকে অপসারণ নতুবা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আবহ তৈরির আভাস দেয়। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদশির দাবি, বাস চালক আলমগীরের অভিযোগ অভিনয় স্বরূপ। গাড়ি এলোমেলো করে পার্কিংয়ের মাধ্যমে চলাচলে প্রতিবন্ধকতায় তাকে অভিযুক্ত করে লাঞ্ছিত নয়, খিস্তিখেউর করে বেজ্জতি করা হয়েছে মাত্র। একজন বাস মালিক সমিতির সভাপতি এ ধরণের ভূমিকা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে গোটা বিষয়টি ছিল যে পরিকল্পিত তা সহজেই অনুমান করা গেছে।
দুপুরে দুড় পাল্লার গাড়ি আসার মুহূর্তে কয়েকটি লোকাল গাড়ি যেভাবে টার্মিনালের প্রবেশদ্বারে এলোমেলো করে রাখার ধরন দেখে বোজা গেছে আফতাবকে ক্ষিপ্ত করতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে আফতাব অল্পতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। সেই সুযোগটি নিয়েছিল একটি মহল। বাস চালক আলমগীরকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আন্দোলনের নেপথ্যের অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যায়। ঘটনায় আলোচিত এই বাস চালক টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি যুবলীগ নেতা লিটন মোল্লার বাড়ির পাশের পড়শি।
সম্পর্কে মামা হিসেবে ডাকেন। তাছাড়া নথুল্লাবাদ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও লিটন মোল্লার সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। ধারণা করা হচ্ছে, আলমগীরের সাথে তুচ্ছ ঘটনায় হঠাৎ করে পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলনে এতটা একট্টরা হওয়ার ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর ও লিটন মোল্লার পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু জাহাঙ্গীর হোসেন পেছনে থাকলেও লিটন মোল্লা ভূমিকায় চলে আসেন প্রকাশ্যে।
দেখা গেছে, একট্টা হওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে লিটন মোল্লা হাজির হওয়া মাত্রই পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং আফতাবকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। জানা গেছে, শক্তির দিক থেকে আফতাবও কম নন। টেম্পু শ্রমিকদের নেতা লিটন মোল্লা কোন ক্ষমতায় সেখানে আসলেন তাও পরিস্কার হয়ে যায় তার নিজের বক্তব্যেই। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে তার উপস্থিতির কথা জানিয়ে আফতাবের মত নেতার বিচার চাওয়ায় বাস মালিক সমিতির অন্যন্য নেতাদের তখনি ভাবিয়ে তোলে।
এ বিষয় লিটন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হয়ে, তিনি মেয়রের নাম ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু স্বীকার করেন আফতাবের জুলুমবাজির কারণেই শ্রমিকদের এক কাতারে আনতে তার সমর্থন ছিল। গত ৫দিন ধরে দফায় দফায় শ্রমিকরা যেভাবে আফতাবের অপসারণে চড়াও হচ্ছিল তা ছিল কল্পনা অতীত। বাস মালিক সমিতির এই নেতা একাধারে ২১ বছর ধরে একই পদে রয়েছেন।
আ.লীগ রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ক্ষমতাও কম নয়। আ.লীগের জেলার কর্ণধর আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত। প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলেও একই কাদায় আন্দোলন তৈরি করে আফতাবকে কোনঠাসা করে টার্মিনাল থেকে বিতারিত করা হয়েছিল। একাধিক সূত্রের দাবি, সেই পূর্ব ঘটনার যেনো পুনোবৃত্ত ঘটল বর্তমান ঘটনায়।
বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ আফতাবের পক্ষে অবস্থান নিলেও শ্রমিকদের শান্ত করতে পারেনি কোন প্রতিশ্রুতিতে। বরং পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলা হচ্ছিল। এটা ছিল আফতাবকে টার্মিনাল অঙ্গনের ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার একটি কৌশল। একদিকে লিটন মোল্লা প্রকাশ্যে মাঠে অন্য দিকে জাহাঙ্গীর হোসেন নেপথ্যে থেকে শ্রমিকদের উসকে দেয়ায় একাধিক বৈঠকেও সমাধান টানা সম্ভাবপর হয়নি বলে জানান একজন বাস মালিক। নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই পরিবহন ব্যবসায়ী জানান, উপরের মহলের চাপের কারণে অবশেষে আফতাব হোসেন পদত্যাগের সিদ্ধান নেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি লিখিতভাবে তার অব্যহতিপত্র সমিতির কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। এ প্রতিবেদকের কাছে আফতাব এক কথা নিশ্চিত করলেও বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
তাতে অনুমান করা গেছে কোন এক শক্তির চাপের মুখেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে আফতাবের এই পদত্যাগেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি লিটন মোল্লা। তিনি জানান এটাও একটি নাটক! তার ভাষায় পদত্যাগ করলে কিভাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ইউনুস খান কে দায়িত্ব দিলেন।
তাকে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল এই আন্দোলনে আপনি কেন এতো উৎসাহি। উত্তরে যা বললেন, তার সারকথা হচ্ছে আফতাবকে শ্রমিকরা যেখানে চান না, সেখানে দলের শীর্ষ নেতা কিভাবে চান। এই কথায় ফাঁকে বলে ফেলেন বাস মালিক সমিতির মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কথা হয়েছে। তিনি শোনেননি, যেনেছেন।
Leave a Reply